স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানির চাঁপে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় প্রায় ৮৮ কিলোমিটারেরও বেশি বাঁধ আংশিক ও সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া পানি ব্যবস্থাপনার আরও ৪৫টি অবকাঠামো ও নদীতীর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা প্রাথমিক হিসাব, পূর্ণাঙ্গ হিসাব পেতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে জানিয়ে গতকাল শনিবার সকালে পাউবোর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, প্রাথমিক হিসাবে যে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাওয়া গেছে, তা পুনর্বাসনেই ১৬৩ কোটি প্রয়োজন। তবে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা অনুযায়ী এ ব্যয় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সূত্রমতে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের মধ্যে বরিশাল জেলায় সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে কূন্য দশমিক ২২০ কিলোমিটার এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩ দশমিক ৬৬৯ কিলোমিটার বাঁধ। ভোলায় ২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সম্পূর্ণ এবং ৬ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার আংশিক। বরগুনায় সম্পূর্ণ ক্ষতি দশমিক ৬৫০ কিলোমিটার এবং ১৬ দশমিক ৫৮০ কিলোমিটার আংশিক। পটুয়াখালীতে আংশিক ৩০ দশমিক ৬১৫ কিলোমিটার এবং সম্পূর্ণ ১১ দশমিক ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ। ঝালকাঠিতে সম্পূর্ণ কূন্য দশমিক ১০০ কিলোমিটার এবং আংশিক ১ দশমিক ৫০০ কিলোমিটার। পিরোজপুরে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে ৩ কিলোমিটার এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৩ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার। এছাড়াও বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার সন্ধ্যা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উজিরপুর-সাতলা বেড়ি বাঁধ সড়ক ভেঙ্গে গেছে। ফলে চারটি ইউনিয়নের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানির চাঁপে সড়ক উপচে সাতলা, বরাকোঠা, ওটরা ও হারতা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলায় হিজলা উপজেলার পুরাতন হিজলা এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৩০০ মিটার ভেঙ্গে গেছে। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি শ্রীপুর ইউনিয়নের বহেরচরের পাঁচটি ঘর পানির চাপে ধসে পরেছে। পানির চাঁপে জয়নগর, দড়িরচর-খাজুরিয়া, বিদ্যানন্দপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাঁধ, রাস্তা, সেতু ও কালভার্টের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে ইয়াসের প্রভাবে মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভাগীয় মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান তালুকদার প্রাথমিক হিসাবে বলেন, বিভাগের ছয় জেলায় ভেসে গেছে প্রায় ১৭ হাজার ২০৯টি ঘের ও পুকুরের মাছ। মৎস্য খাতে মোট ৮২ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে জোয়ারের পানিতে বিভাগের প্রায় এক হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রশাসন। বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক জানান, কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পানির চাঁপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা-পাকা সড়কও। এছাড়াও গাছপালা, পানের বরজ ও শাক সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পূর্নাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপনের কাজ চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
Leave a Reply